সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন ও লুটপাট হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে হিন্দুদের মন্দিরে এবং যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনায় বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাট হামলা করা হয়।
যশোর
যশোরে অর্ধশত হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাট, ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। । ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাড়ির কয়েকজন মালিক বলেন, কয়েক শ লোক বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারের অন্তত ২৫টি দোকানে হামলা চালায়। এর মধ্যে ২০টি দোকানের মালিক হিন্দু। হামলাকারীরা দোকান আগুন ও লুটপাট ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
নোয়াখালী
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিনটি বাড়িতে ও চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাট অভিযোগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি নারীদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া জায়। নির্যাতনের শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে হাতিয়া থানায় ও কোস্টগার্ডকে ফোনে জানানো হলেও কেউ ঘটনাস্থলে যায়নি।
ঢাকার ধামরাই
ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় ১০০ থেকে ১৫০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে স্থানীয় একটি বাড়িতে হামলা চালায়। আগুন ও লুটপাট হামলাকারীরা বাড়ির লোহার মূল ফটক ভাঙচুর করেন। টিনের ঘরে ঢোকার ফটকটি ভাঙেন। বাড়ির বারান্দার পাশে থাকা তিনটি কক্ষের তিনটি জানালার কাচ, দুর্গা মন্দিরের সামনে কয়েকটি চেয়ার আর বাড়ির বাইরে থাকা গ্যারেজের দুটি প্রাইভেট কারের সব কাচ ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা।
নাটোর
নাটোরের লালপুরে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতির বাড়িসহ ছয়টি বাড়ি ও একটি মন্দিরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।সূত্রে জানা যায়, তাঁর কয়েকটি বাড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকা, চার ভরি স্বর্ণের গয়না, ল্যাপটপ, মুঠোফোন, চালের বস্তা লুট করে নিয়ে যায়।
মেহেরপুর
মেহেরপুরে হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বাজারে ঢুকেই কয়েকটি দোকানপাটে ভাঙচুর ও আগুন ও লুটপাট করা হয়।
দিনাজপুর
দিনাজপুরের অন্তত ৪০টি দোকানপাটে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। অন্তত ১০০ জন দলবদ্ধ হয়ে বাজারে ঢুকে অতর্কিত আগুন ও লুটপাট, হামলা চালায়। পরে বাজারসংলগ্ন সহসপুর গ্রামের দিকে অগ্রসর হলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের বাধা দেন। পরে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিয়ে তারা চলে যান। হামলাকারীদের হাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র ছিল।
চাঁদপুর
চাঁদপুরে পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদারের শহরের আদালত পাড়ার বাসায় এবং ফরিদগঞ্জে গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, আগুন ও লুটপাট দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা বাড়ির ৪/৫টি বসত ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বেশ কিছু আসবাবপত্র ও একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শরীয়তপুর
শরীয়তপুর জেলা শহরের ধানুকার একটি মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়। দুর্বৃত্তরা মন্দিরটি ভেঙে দিয়ে কিছু আসবাবপত্র নিয়ে চলে যায়। মনসা বাড়ির ৮৯ শতাংশ জমির দেবোত্তর একটি পুকুর দখল করে রেখেছিল স্থানীয় একটি পক্ষ। দখল হয়ে যাওয়া সেই পুকুরটি গত বছর উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। পুকুরের সেই জমিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত মার্চে কৃষ্ণ মন্দির নির্মাণ করা হয়।
খুলনা
খুলনার দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে ১১টি হিন্দু বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার বেশির ভাগ বাড়ির মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
ফরিদপুর
ফরিদপুরের মধুখালী ও সদরপুরে হিন্দুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। একজন চিকিৎসকের বাড়িসহ চিকিৎসকের ফার্মেসি ও বাড়ির কালীমন্দিরে ভাঙচুর করে। অপরদিকে একটি কাপড়ের দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রংপুর
রংপুরের তারাগঞ্জে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ভাঙচুর করে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। প্রাচীর ভেঙে ইটও খুলে নেয় হামলাকারীরা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তাঁর দেশ ছাড়ার খবরের পর আনন্দমিছিল বের হয়। সেখান থেকে নানা স্থানে আগুন ও লুটপাট হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
—————————————————————
আরো খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন এবং ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।