রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে অ্যামেরিকা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। এ ছাড়া তাদের নামে বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা জমা হয়েছে।
তবে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাদের পরিবারের কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে অর্থ নেননি। ফলে বিপুল সম্পদ কীভাবে গড়ে উঠেছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং তাদের নামে থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ। এই অনুসারে, পরবর্তী ৩০ দিন কোনও লেনদেন করা যাবে না। এমনকি তাদের নামে ক্রেডিট কার্ডেও কোনো লেনদেন হবে না।
রুখমিলা জামান চৌধুরী এখন বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৮-২০২৩ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত নির্বাচনের আগে বিদেশে তার বিপুল সম্পদের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় বিদায়ী সরকারে তাকে মন্ত্রী করা হয়নি।
বিএফআইইউয়ের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১৪ সালে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই ও ২০১৫ সালে জেবা ট্রেডিং এফজিই নামে কোম্পানি খোলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এর মধ্যে র্যাপিড র্যাপ্টর এফজিই কম্পিউটার ও সফটওয়্যার ব্যবসা এবং জেবা ট্রেডিং এফজিই ভবন নির্মাণসামগ্রী বিক্রির জন্য নিবন্ধিত।
সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব রয়েছে দুবাই ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের দুবাই শাখায়। এসব হিসাবে জমা রয়েছে ৩৯ হাজার ৫৮৩ দিরহাম ও ৬ হাজার ৬৭০ ডলার। সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৭ সাল থেকে গত মাস পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৬টি স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করেছেন।
রুখমিলা জামানের নামে ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ও ৩০ নভেম্বর দুবাইয়ের আল-বারশা সাউথ-থার্ড এলাকায় দুটি স্থাবর সম্পত্তি কেনা হয়। এই সম্পত্তির মূল্য ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭ কোটি টাকার সমপরিমাণ।
এদিকে অ্যামেরিকাতেও তাঁদের সম্পদের খোঁজ পেয়েছে বিএফআইইউ। ২০২১ সালের ৮ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অ্যামেরিকাভিত্তিক ‘টিডি ব্যাংকে’ সাইফুজ্জামান চৌধুরীর জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসির হিসাবে ৪৫ হাজার ৩৪০ ডলার জমা হয়। এসব অর্থ জমা হয় ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে।
এ ছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান আরামিট প্রপার্টিজ এলএলসি এবং জিটিএস প্রপার্টিজ এলএলসি পক্ষে ফার্স্ট আমেরিকান টাইটেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৭ লাখ ৬৫ হাজার ডলার জমা করা হয়।
গত নির্বাচনের আগে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। পরে এই মন্ত্রীকে সাইফুজ্জামান চৌধুরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
জানা যায়, অ্যামেরিকাতেও স্ত্রী রুখমিলা জামান এবং মেয়ে জেবা জামানের নামে কোম্পানি খুলেছেন সাবেক মন্ত্রী। এ ছাড়া পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামেও সে দেশে একটি কোম্পানি খুলেছেন তিনি। গত মার্চের সংবাদ সম্মেলনে সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা স্বীকার করেন।