শরিফুল হাসান, কলামিস্ট
ডিমের ডজন ১৮০ টাকা হলো কেন? কেন বাংলাদেশে ডিমের দামের এই নয়া রেকর্ড? দুই মাসে আগে যে ঢেড়সের দাম ছিল ৩৯ টাকা কেজি তার কেজি এখন ১১০ টাকা কেন? সব জিনিসের দাম কেন উর্দ্ধমুখী? কেন এখন বাজার সিন্ডিকেট ভাঙছে না? কেন দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না?
আচ্ছা সাধারণ মানুষের পেটের ভাত আর সবজি কিনতে জীবন ছুটে যাবে সেই কারণেই কী পরিবর্তন চেয়েছিল? জিনিসপত্রের দাম না কমলে তারা কী সংস্কার ধুয়ে খাবে? দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গত দুই মাসে কী করেছেন আপনারা? কেন পারেননি সেই জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেছেন কী?
দেখেন মাননীয় কর্তারা! আপনারা কে ক্ষমতায় গেলেন কী সংস্কার করলেন সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না যদি না জিনিসপত্রের দাম কমে। আপনারা বলেন তো গত দুই মাসে সাধারণ মানুষের জীবনে কী স্বস্তি দিয়েছেন? আচ্ছা ঢাকার রাস্তায় কেন ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়? কেন যানজট রেকর্ড ছাড়াচ্ছে? আচ্ছা নারীদের কেন নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে এই শহরে? কেন আইনের শাসনের পথে হাঁটছে না বাংলাদেশে? কেন দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না?
দেখেন আমি সিএনজি রিকশায় চড়ি। নিয়মিত মানুষের সাথে কথা বলি। মাত্র দুই মাস আগেও সাধারণ সব মানুষ শেখ হাসিনার পতন চেয়েছিল। এটি অনিবার্য ছিল। কোন মাস্টারমাইন্ড নয় এই দেশের অধিকাংশ মানুষ চেয়েছিল বলেই এই পরিবর্তন। কিন্তু দুই মাস পর এখন লোকজনকে জিজ্ঞেস করেন। অনেক মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। জানি না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটা বুঝতে পারছে কী না!
আপনারা একটা কথা মনে রাখবেন ইরাক, লিবায়া, সিরিয়া, মিসর, তিউনিসিয়াসহ যেখানে গণবিক্ষোভে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে অধিকাংশ দেশেই কিন্তু একনায়কতন্ত্র জেঁকে বসেছিল। গাদ্দাফি বা সাদ্দাম অনেক উন্নয়ন করেছিল কিন্তু মানুষকে কথা বলতে দেয়নি। সমালোচনা করতে দেয়নি। ফলে জনগণ পরিবর্তন চেয়েছিল। পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারা বলা শুরু করেছে সাদ্দাম বা গাদ্দাফি ভালো ছিল।
আসলে কিন্তু সাদ্দাম গাদ্দাফি ভালো ছিল না পরের পুতুল সরকারগুলো এতো খারাপ কাজ করেছে যে জনগণ বলতে বাধ্য হয়েছে সাদ্দাম গাদ্দাফি ভালো হয়েছে। আপনাদের বলবো দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করুন। জিনিসপত্রের দাম কমান। গত দুই মাসে জিনিসপত্রের যে দাম বাংলাদেশে কখনো এতো দাম ছিল না। কাজেই সিন্ডিকেট ভাঙুন।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনি না বলেছিলেন আমাদের লক্ষ্য একটি লক্ষ্য—উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কোথায় সেই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ? মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন না কেন? দয়া করে প্রশ্ন নিন সাংবাদিকদের। মানুষের কথা শুনুন। আলতু ফালতু নিয়োগ বন্ধ করুন। অতীতের মতো মিথ্যা মামলা, দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করুন। মানুষকে সেবা দিন!
আচ্ছা এক সভা করে কেন সংস্কার কমিটির সদস্যরা একটা মিটিং করে ১০ হাজার টাকা নেবে? আপনারা উপদেষ্টারা মাসে মাসে লাখ টাকা গাড়ি বাড়ি সবই সুযোগ সুবিধা পেলে নিহতরা কেন মাত্র ৫০ হাজার টাকা পাবে? কেন সাধারণ মানুষের বাজারে গিয়ে কেন নাভিশ্বাস উঠবে? কেন ঢাকা শহর যানজটে অচল থাকবে? কেন আহতরা সবাই সুচিকিৎসা পাবে না? কেন নিহত প্রতিটা পরিবারের দায়িত্ব আপনারা নেবেন না?
এগুলোর জবাব দিন। আমরা এতো দোহাই শুনতে চাই না। আমরা পরিবর্তন চাই। আপনার না হয় বিদেশি পাসপোর্ট আছে আমাদের তো নেই। আমাদের তো ঠিকানা শুধুই বাংলাদেশ! আবারো বলছি তারুণ্যের কথ শুনুন। মানুষের কথা শুনুন।
আবারো বলছি আমরা এক খারাপ থেকে আরো খারাপ হতে চাই না। আমরা সামনে এগুতে চাই। সুন্দর বাংলাদেশ চাই যে বাংলাদেশের জন্য একাত্তর থেকে চব্বিশে বারবার তরুণরা প্রাণ দিয়েছে! আশা করছি আপনাদের সবার বোধ জাগবে!