মো.আহারার হোসেন
যারা আমার সাথে ইদানিংকালে মেশেন বা যাদের সাথে আমার দেখাসাক্ষাৎ ঘটে তারা জানেন আমি স্বল্ববেশ পছন্দ করি। আমার প্রিয় পোশাক আধাপ্যান্ট। নিতান্ত ফরমাল কিংবা সামাজিক কোন গ্যাদারিংয়ে যাইতে না হইলে গত বছর তিনেক ধইরা আধাপ্যান্টই আমার প্রথম পছন্দ। যেহেতু লুংগি গিঁটাইতে পারি না তাই অভ্যাসও আধাপ্যান্টের। এই আধাপ্যান্ট পইরা আমি পাঁচ-ই অগাস্টের সেলেব্রেশনেও গেছিলাম।
তারপরও নতুন বাংলাদেশে আমার আধাপ্যান্ট পরা কইমা গেছে। এইটা যে সচেতনে হইছে তা না। অবচেতনেই হইছে। এর সাথে আমার নতুন কেনা গোটা দুই ডিস্কাউন্টের শার্টের সম্পর্ক থাকতে পারে। শার্টগুলার সাথে আধাপ্যান্ট ঠিক যায় না। ব্যাপারটা আমার একাধিক প্রিয় মানুষ লক্ষ্য করছেন। তারা প্রশ্ন তুলছেন – আমারে কেন আর আধাপ্যান্টে দেখেন না?
তো আমার এই আধাপ্যান্ট পরা নিয়া ঘটনা সেইদিন ঘইটাই গেল। জিমে যাইতেছিলাম। গাড়ি পার্ক কইরা কিছুদূর হাঁটতে হয়। এই হাঁটাপথেই এক চাচা আমার আগাপাশতলা ধুইলেন। আমার মত মানুষের কারণেই নাকি দেশের আজকে এই অধঃপতন। যাহউক। মাইনা নিয়া জোর কদমে পা চালাইলাম। তো চাচার এই কথায় কি আমি দুঃখিত হইছি? না। এই চাচা কি মাত্র দুইমাস আগে জন্ম লইছেন। না? এই চাচারা কি হঠাৎ কইরা এইরকম ধ্যানধারণা পোষণ করা শুরু করছেন? না।
এই চাচা এবং আরো যে চাচাসকল এবং আরো যেসব যুবা এবং আপা খালারা আমার স্তনসন্ধি-বাহুমূল প্রকাশিত করা আপারে নিত্য নছিহত করেন তারা কি আগে ছিলেন না? ছিলেন। তয় এরা চুপ ছিলেন। কারণ তারা মনে করতেন এই দেশ ভারতের করদরাজ্য ছিল। এখন তারা স্বাধীন হইছেন। এবং পুনরায় পাকিস্তানি ভাবধারায় ফেরৎ আসছেন।
তারা এইটাও ভুইলা গেছেন যে জুলাই অগাস্ট জুইড়া রাস্তায় তাদের ইউনিফর্মের চাইতে এই প্রদর্শনী করা আপা ও আধাপ্যান্ট ভাইরাই বেশি আছিলেন। তাই তারা ইউনিফর্ম ঠিক কইরা দেবেন। এই জুজু দেখাইয়াই আপনার আমার ভোট কাইড়া নেয়া হইছিল পনের বর্ষ ধইরা। সেই জুজু আপনারা সইত্য করতেছেন। করেন।
আপনারা মণ্ডপে মণ্ডপে গিয়া গিয়া আরো আরো হামদ নাত পরিবেশন করেন। করতে থাকেন। নিশ্চিত আপনাগো ভোট বাড়ব। এতদিন ভোট লাগে নাই। তয় এখন ভোট লাগব। আর যেহেতু আপনারা সংখ্যায় বেশি তাই আপনারাই জেতবেন বলে আশা করতে পারেন।
এইসব কাজ আপনারা করতে পারেন কারণ আপনারা সংখ্যায় বেশি। আপনারা ইন্ডিয়ায় পারতেন না। বরং ওইখানের মণ্ডপে গেলে আপনাকে দুই পেগ গোচনা পান করাইয়া দেয়া হইত। সুন্নিরা ইরানে পারেন না। শিয়ারা পাকিস্তানে পারেন না। আপনারা নিজেদের ভাই ভাই করেন কিন্তু ওইসব জায়গায় এক ভাই আরেক ভাইর মাথা ফাটান।
জোর যার মুল্লুক তার। একই থিওরিতে মেরিকা ইউরোপ খ্রিষ্টানদের। মিয়ানমার বৌদ্ধদের। এই সংখ্যা কিংবা গায়ের জোরে সবকিছু দখল করারেই ফ্যাসিজম বলে। যে যেখানে বেশি সে সেখানে ফ্যাসিস্ট। আপনারা ভাবছেন দেশ থেকে ফ্যাসিজম হটাইছেন? ঘণ্টা করছেন! এ দেশে হাটুরে কিল দেয়ার সময় কানা খয়রাতিও গিয়া ভাগের কিল দিয়া আসে।
মুখচোরা চুপচাপ গোবেচারা মধ্যবিত্তও তখন ফ্যাসিস্ট হইয়া ওঠেন। আপনারা ভুইলা যান ইউনিফর্ম পরার অধিকার যেমন আপনার আছে, যে আপনার ইউনিফর্মরে পোছেন না তারও আছে। যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধান এই স্বাধীনতার অধিকার দেছেন, এবং এখনো যেহেতু আপনারা সেই সংবিধান ছুঁইড়া ফেইলা দিতে সমর্থ হন নাই, কিন্তু যেহেতু আপনারা দলে ভারী, তাই চালাইদেন।