প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছে। পদত্যাগ ঘোষণার আগে ‘বিদায়ী ব্রিফিং’- এ ভবিষ্যতের প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন হাবিবুল আউয়াল।
হাবিবুল আউয়ালের ব্রিফিংয়ে পড়া লিখিত ভাষণের শব্দসংখ্যা ছিল সাত শতাধিক। লিখিত ভাষণের শেষে ‘নিজের অভিজ্ঞতার নিরিখে’ তিনি কিছু প্রস্তাবনা দেন। হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বর্তমান ও অতীত থেকে আহৃত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও উপলব্ধি থেকে ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা সরকারের সদয় বিবেচনার জন্য রেখে যাওয়া কর্তব্য মনে করছি।
ভাষণে দেশের প্রতিটি নির্বাচনের ইতিহাস তুলে ধরেন হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, দেশের প্রথম সাংবিধানিক সাধারণ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক ছিল। ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচন সামরিক শাসনামলে হয়েছে। ফলাফল নিয়ে বিতর্ক ছিল। ১৯৯১ সালের নির্বাচন রাজনৈতিক রূপরেখার ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন হয়েছিল। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন সাংবিধানিক নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন, সূক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপির সীমিত সমালোচনা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল।
২০০৮ সালের নির্বাচন সেনাসমর্থিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সংসদে মাত্র ২৭টি এবং আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পেয়েছিল। সেই নির্বাচন বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দলই অংশগ্রহণ করেনি উল্লেখ করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সেই নির্বাচনও ২০২৪ সালের অনুরূপ অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে। আসন পেয়েছিল মাত্র ৬টি। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ২৫৮টি। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচন স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার মতো কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না। সে কারণে অনেকেই কমিশনকে দোষারোপ করছেন।
নির্বাচন নিষ্পন্ন করা অতিশয় কঠিন একটি কর্মযজ্ঞ। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার সব দোষ বা দায়দায়িত্ব সব সময় কেবল নির্বাচন কমিশনের ওপর এককভাবে আরোপ করা হয়ে থাকে।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে হওয়া অতীতের অন্যান্য নির্বাচন ছাড়াও ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিতর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন পরবর্তী সব নির্বাচন সতর্কতার সঙ্গে আয়োজনের চেষ্টা করেছে।
জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে দিনের বেলায় ব্যালট পেপার প্রেরণ, কিছু উপনির্বাচনে ভিডিও পর্যবেক্ষণ, ইভিএম ব্যবহার, দেশের সব জেলায় একই দিনে তবে প্রতিটি জেলার প্রশাসনিক সীমানার মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিন বিরতি দিয়ে পাঁচ থেকে ছয়টি ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠান, সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপকভাবে রদবদল ইত্যাদি গৃহীত ব্যবস্থা নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল করতে অনেকটাই সহায়ক হয়েছিল।
নিজেদের কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, দলীয়ভাবে ইনক্লুসিভ না হওয়ার কারণে নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এটি সঠিক ও যৌক্তিক। কিন্তু বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে কোনো নির্বাচন কমিশন সংবিধান উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় নির্বাচন বাতিল করে দিয়ে পদত্যাগ করেছে এবং সেই কারণে নির্বাচন হয়নি — এমন উদাহরণ নেই।
সবশেষে হাবিবুল আউয়াল বলেন তার কর্মকালে গণমাধ্যম, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীসহ আবশ্যক সবার সহযোগিতা পেয়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ।
previous post