New York Bangla Life
বাংলাদেশবিশেষ প্রতিবেদন

ফুরফুরে বিএনপির কপালে ইউনূস সরকার নিয়ে হঠাৎ চিন্তার ভাঁজ

অন্তর্বর্তী সরকার জেঁকে বসার ইঙ্গিত দিয়ে আরও পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির জমায়েতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারা সরকারকে ততদিন সমর্থন দেবেন, যতদিন এই সরকার তাদের ভাষায় গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে।


সংবিধান মেনে চলার শপথ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে যে শপথ নিয়েছেন, তাতে সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে তিনি কি নির্বাচন দিতে যাচ্ছেন?- এই প্রশ্নের মধ্যে বিএনপি নির্বাচনের কথা বলতে শুরু করেছে।

তবে এরই মধ্যে ১৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদে আরও পাঁচজন ‘ঝানু খেলোয়াড়’ যুক্ত করার সিদ্ধান্তের পর এটা আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে অনির্বাচিত এই সরকার জেঁকে বসতে যাচ্ছে লম্বা সময়ের জন্য।

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করার আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো যে বৈঠক করেছে, সেখানে বিএনপি নির্বাচনের কথা তোলেনি। তবে দুই দিন যেতে না যেতেই দলটির ঢাকা ও চট্টগ্রামের সমাবেশে নির্বাচনের কথা তোলা হয়েছে। সরকারের প্রতি এখন সমর্থন থাকলেও সেটা যে সব সময় থাকবে না, সেই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির উচ্ছ্বাসের মধ্যে দলটির নেতাদের বক্তব্যে মনে হচ্ছে কোথাকার জল আসলে কোথায় গড়ায়, তা নিয়ে চিন্তিত তারাও।

ঢাকায় সমাবেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইউনূস সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকার একটু স্বস্তি ফিরিয়ে এনে একটা সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন দেবে। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে, আমরা সেটাই চাই।

“আমরা চাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তন হোক। আমরা যৌক্তিক সময়ও দিতে চাই।”

এই যৌক্তিক সময়ের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রথমে অবস্থান ছিল ৯০ দিন।

গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এসে এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছিলেন ফখরুল। বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে সংসদ ভেঙে গিয়ে এই সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন।

রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলেও নির্বাচনের কোনো সময়সীমা উল্লেখ করেননি। তবে ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে যে সরকার শপথ নেয়, তাতে সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করা হয়েছে। সংবিধানে কিন্তু সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করার কথা বলা আছে। কোনো দৈব দুর্বিপাকে এই সময়ে নির্বাচন করা না গেলে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করতেই হবে।

সরকার শপথ নেওয়ার আগে ৭ আগস্ট নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানায়। মির্জা ফখরুল ছাড়াও এই দাবি করেন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।

উচ্চ আদালতের আদেশে তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেই বক্তব্য লাইভ হয়েছে, অবশ্য সরকার পতনের পরেও তার ফেইসবুক লাইভের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশ করেছে দেশের গণমাধ্যম।

তবে ইউনূস সরকারের উপদেষ্টারা সরকারের মেয়াদের প্রশ্নে বিরক্তি প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন সংস্কারের কথা।

দেশের গণমাধ্যমের কাছে এ বিষয়ে মুখ না খুললেও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া কঠিন।

নির্বাচন হবে, এই প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে কথা বলতে হয়েছে। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের সময়রেখা (টাইমলাইন) সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ আরও স্পষ্ট হবে। এখন উপদেষ্টা পরিষদের সবাই দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে ভীষণ ব্যস্ত। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা প্রকাশ করি।”

নির্বাচনের আগে ইউনূস সরকার যে সংস্কারের কথা বলছে, এর মানে কী, সেটি কিন্তু স্পষ্ট করছেন না। তবে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের প্রশাসনে কর্তা ব্যক্তিদের পাল্টে দেওয়াই তাদের মূল আগ্রহ।

পুলিশ, প্রশাসন ও উচ্চ আদালতে যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে তাতে পদগুলো বিএনপি ও জামায়াতপন্থিদের মধ্যে ভাগাভাগি হচ্ছে- এটা বোঝাই যাচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়টি আবার অন্য রকম। সেখানে যারা নিয়োগ পাচ্ছেন, তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করে আসা বা দেশটির নানা সংস্থার সঙ্গে কাজ করা লোকেরাই প্রাধান্য পাচ্ছেন। উপদেষ্টা পরিষদে আবার প্রথম আলোর কলাম লেখকের তালিকার অংশগ্রহণই বেশি।

নতুন করে শপথ নেওয়ার জন্য ডাক পেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আলী ইমাম মজুমদার ছাড়াও সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান।
সংবাদমাধ্যমে নাম এসেছে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদেরও। নাম এসেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম বিডিআর থাকার সময় এর মহাপরিচালক লে. জে (অব.) জাহাঙ্গীর আলমেরও।

অর্থাৎ ইউনূস সরকার জেঁকে বসতে যাচ্ছে, কিন্তু এমন দিনই নয়া পল্টনের সমাবেশে মির্জা ফখরুল এই সরকারকে একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এটা ছাত্র-জনতার সরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।”

অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকার বেশিদিন থাকলে বিএনপি সেটা মেনে নেবে না- এমন প্রচ্ছন্ন একটা হুঁশিয়ারি দেয় রাখলেন ফখরুল, যা গত ১৩ আগস্টের বক্তব্য থেকে কিছুটা আলাদা। সেদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেছিলেন, তারা নির্বাচনের কথা তোলেননি, তারা এই সরকারকে সময় দিতে চান।

একই দিনে বিএনপি চট্টগ্রামে যে সমাবেশ করেছে, সেখানেও একই ধরনের বক্তব্য এসেছে। সেই সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার আপনারা এসেছেন, আমরা সবাই আপনাদের সমর্থন দিচ্ছি। জনগণের রায় বাস্তবায়নের জন্য একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করা দরকার।”

একই দিন বিএনপির দুই সমাবেশেই নির্বাচনের দাবি তোলার অর্থ হল দলটি এই সরকারের নির্বাচন ভাবনা নিয়ে আসলে কিছুটা হলেও সন্দিহান।

আবার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রশ্নে বিএনপি আসলে কী চাইছে, সেটি বোঝা মুশকিল। তবে তারা তাদের নেত্রীকে এখন দেশের বাইরে পাঠাতে রাজি না, তারেককেও দেশে ফেরাতে আগ্রহী না, এটা অনেকটা স্পষ্ট।

আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় গত চার বছর ধরেই বিএনপি তার চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বারবার দেশের বাইরে পাঠানোর দাবি করেছে। সরকার যখন কর্ণপাত করেনি, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের নেত্রী জীবন সংশয়ে, এমনও বলা হয়েছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশ না পাঠালে সর্বনাশ হয়ে যাবে।

কিন্তু ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেওয়ার পর বিএনপি তার তাকে দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসার কথা তুলছেও না। শোনা যাচ্ছে, সরকার চায় বিএনপি নেত্রী দেশের বাইরে যাক, কিন্তু বিএনপি এখন এটা চাইছে না। বরং তার চিকিৎসকরা এখন বলছেন, দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল সইতে পারার মত প্রস্তুত নন খালেদা জিয়া।

তারেক রহমানও দেশে ফেরার বিষয়ে কোনো কথা বলছেন না, যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি তার নেতাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছিল।
খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল হলেও তারেকের সাজা বাতিল প্রশ্নে বিএনপি প্রকাশ্যে কিছু বলছেও না, তিনি নিজেও দেশে ফেরার প্রশ্নে একেবারে চুপ।

এর মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে বরং শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বারবার তাগাদা দিচ্ছেন, তিনি সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন। একটি গণ আন্দোলনের মধ্যে পতন হওয়া সরকারের প্রধানের ছেলের এমন দাবিতে এটা স্পষ্ট হয় যে, জনরায়ের প্রশ্নে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রয়ে গেছে এখনও।

তবে সরকার দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আসলে কী করছে, এটাই একটা বড় প্রশ্ন। দেশে সরকারের অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে কেবল বিভিন্ন বদলি, চাকরিচ্যুতি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আদেশ বাতিল প্রশ্নে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ, পুলিশ কাজে যোগ দিলেও তাদের অভিযান বা টহলে বের হওয়ার মত গাড়ি নেই, কত অস্ত্র খোয়া গেছে, তা জানে না কেউ। খোয়া যাওয়া কিছু অস্ত্র ফেরত আসছে, তবে আরও কতগুলো বেহাত, তার কেউ কিছু জানে না। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেই, কোনো বৈঠক হয়েছে, এমন কথাও বলা নেই।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্যস্ত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে ফাঁসাতে।

সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় গণহত্যার অভিযোগ এনে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার ঘটনাটি নিছক একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রতিশোধ কিনা, সেই প্রশ্ন আছে। নইলে গণহত্যার আন্তর্জাতিক যে সংজ্ঞা, তাতে সংঘাতে মৃত্যুর ঘটনা এই অপরাধের আওতায় কীভাবে বিচার সম্ভব, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

শেখ হাসিনা আর তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। মামলাগুলোর অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া মানুষগুলোই সমালোচনা করছে, এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের কট্টর সমালোচক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানও বলছেন, এ কী হচ্ছে?

এর মধ্যে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়া মানুষদের সঙ্গে যা যা হয়েছে, তা সভ্যতার সীমা অতিক্রম করে গেছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ যারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন, তাদের বেদম মারপিটের শিকার হতে হয়েছে, কাদেরকে পিটিয়ে বেঁধে রাখার পর সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

একজন প্রবীণ মানুষকে পেটানোর পর বিবস্ত্র করার ভিডিও ছড়িয়েছে, আরেকজন প্রবীণকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে।

আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, একজনকে ধানমন্ডি লেকে ফেলে পেটানো হয়েছে, তাকে পানি থেকে উঠতে বাধা দেওয়া হয়েছে, যারা ছবি বা ভিডিও ধারণ করেছে, তাদের ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়েছে, সাংবাদিকদেরকে ছবি ও ভিডিও ধারণ না করতে হুমকি দেওয়ার খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

এসব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্যই আসেনি, ব্যবস্থা নেওয়া তা দূরে থাক।

আক্রমণের শিকার হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের বীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীও। তিনি সব দেখে বলেছেন, “আমি দেখলাম- কয়েক জনকে বেঁধে রেখেছে। স্বাধীন দেশে কাউকে কোনোখানে বেঁধে রাখা যায়? এটা কোনো মানবিক ব্যাপার না, আমি এর নিন্দা জানাই এবং সরকারকে বলব, এটা বন্ধ করতে হবে।”

Related posts

অবশেষে জামিন পেলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান

Ny Bangla

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে প্রভাব

Ny Bangla

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ২ উপদেষ্টার দপ্তর বণ্টন

producer

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কারাগারে কিশোর

saeimkhan

উত্তরায় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সড়ক দখলে নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা

saeimkhan

এক দফা দাবিতে যশোরে শিক্ষার্থীদের বিশাল বিক্ষোভ

Ny Bangla

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy